দি এগ অ্যান্ড দি কন্টেক্সট _____ আঃ ওয়াদুদ (প্রভাষক-আইসিটি)

ডিম- প্রাণিজগতের একটি বিস্ময় এবং মানব দেহের সবথেকে বড় কোষের নাম। প্রাণিজগতে ডিম থেকেই নতুন প্রানের সঞ্চার ঘটে। কিছু প্রজাতি আছে যারা ডিম পাড়ার মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে, এদেরকে বিজ্ঞানের ভাষায় অভিপারাস এনিম্যাল (Oviparous Animal) বলা হয়, আবার কিছু প্রাণি আছে যারা ডিম নিজেদের গর্ভে ধারণ করে এবং তা থেকে বংশবৃদ্ধি করে, এদেরকে বিজ্ঞানের ভাষার ভিভিপারাস এনিম্যাল (Viviparous Animal)বলা হয়। ডিম যে শুধুই বংশবৃদ্ধির কাজে ব্যাবহৃত হয়, তা কিন্তু নয়। বাস্তবজীবনেও ডিমের বহুবিধ ব্যবহার লক্ষ করা যায়, যেমন- খাদ্য তালিকায় প্রোটিনের উৎস হিসেবে বিভিন্ন পাখিজাতীয় প্রাণির-ডিমের জুড়ি নেই (একটি ডিমের প্রায় ৩৫% প্রোটিন, ৬২% ফ্যাট এবং ৩% কার্বহাইড্রেট); ডিম থেকে তৈরি নানাবিধ সব মুখরোচক খাবার আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভাসের অংশ। আবার টর্চার সেলে সত্য উদঘাটন থেকে শুরু করে ঘরে বসে রূপচর্চায় প্রায়শই ডিমের ব্যবহার পরিলক্ষীত হয়।

এই ডিম নিয়ে বিভিন্ন রম্যরস/গল্প (সত্যজিৎ রায়ের- টেরোডেকটিলের ডিম), ধাঁধা, এবং তত্ত্বও (The Egg theory by Andy Weir) বেশ পরিচিত। ‘ডিম আগে, না মুরগী আগে’ তেমনি প্রচলিত এবং আলোচিত মজার একটি ধাঁধা। ধাঁধা হলো এমন একটি সমস্যার নাম যেটির সমাধান করতে বেশ কৌশলী, চিন্তুক এবং সৃষ্টিশীল হতে হয়। যেমন- এই ধাঁধার উত্তরে যদি বলা হয় ডিম আগে, তাহলে অবশ্যই তার স্বপক্ষে শক্ত যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে। একটি যুক্তি এমন হতে পারে- ‘বিজ্ঞানের মতে পৃথিবীতে মুরগীর অস্তিত্ব পাওয়ার হাজার-হাজার বছর আগেও ডিমের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।’ যুক্তিটি ১০০% সঠিক, কিন্তু সম্পূর্ণ নয়। কারণ যুক্তিটি যে ডিমের কথা নির্দেশ করে সেটি ডাইনোসরের, মুরগির নয়।

আচ্ছা, ধাঁধাই কি আদৌ মুরগীর ডিমের কথা বলা হয়েছে? না-তো! তাহলে তো এটাই সঠিক উত্তর হওয়ার কথা। আপেক্ষিকভাবে প্রশ্নে মুরগীর ডিমের কথা উল্লেখ নেই বলে মনে হতেই পারে, কিন্তু এখানে মুরগীর ডিমের কথা বলা হচ্ছে। তার মানে উপরের যুক্তিটি ভুল। কোনো সমস্যা বা প্রশ্ন ভালোভাবে বুঝতে হলে তার আশে-পাশের শব্দের দিকে লক্ষ রাখতে হয় এবং প্রশ্নটির ভাব বুঝতে হয়। এটিকে বলা হয়- Understanding the context । ধাঁধা-জাতীয় প্রশ্নের সমাধানে প্রশ্ন বোঝাটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরা হয়। প্রশ্নে যেহেতু মুরগীর কথা বলা হয়েছে, বুঝে নিতে হবে ডিমটাও অবধারিতভাবেই মুরগীর।

যাইহোক, আরেকটি যুক্তি এমন হতে পারে- ‘বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত যে- বনমোরগের মিউটেশন বা বিবর্তনের ফলাফল হলো বর্তমান সময়ের পোষা মুরগী। বলা হয়ে থাকে দুইটি বনমোরগের মিলনের ফলে কোনোভাবে একটি বিবর্তিত ডিমের সৃষ্টি হয় এবং সেই ডিম থেকে মুরগীর আবির্ভাব ঘটে।’ এই যুক্তি অনুযায়ীও ডিম আগে এবং মুরগী পরে। তবে এবারের যুক্তিটি ১০০% সঠিক এবং সম্পূর্ণ। কারণ এখানে প্রশ্নের কন্টেক্সট বুঝে যুক্তিটি উপস্থাপন করা হয়েছে। উপরের দুইটি যুক্তিই বৈজ্ঞানিক এবং দুইটিই একই পরিশেষ নির্দেষ করা সত্ত্বেও একটি ঠিক এবং একটি ভুল হিসেবে বিবেচিত হলো। তাহলে বুঝলেন তো, যে একটি সমস্যার সমাধান করতে প্রশ্ন বুঝে ঠিক যুক্তি উপস্থাপন করা কতটা জরুরি।

Understanding the context- শুধু ধাঁধা বা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর ভূমিকা অপরিসীম। আমরা সচরচর এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হই। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নিজেরা কনটেক্সটবিহীন কথা/যুক্তি উপস্থাপন করি এবং আশেপাশের লোকজনকেও কন্টেক্সটবিহীন কথা/যুক্তি উপস্থাপন করতে দেখি। এতে করে কাজের কাজ কিছুই হয়না, অযথা সময় অপচয় হয় এবং নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই ছাত্র বা শিক্ষক বা প্রফেশনালস হিসেবে আমাদের প্রতিটি উত্তর, কাজ, কথা বা নির্দেশনা কন্টেক্সট অনুযায়ী হওয়া জরুরি। নাহলে দিন শেষে নিজেকে যতটাই সফল ভাবুন না কেন, আপনার প্রাপ্তির খাতায় থাকবে কয়েক হালি ডিম (আপেক্ষিক সফলতা)। ডিম খান, সুস্থ থাকুন।